বাংলাদেশের ফুটবলের উন্নতির পথে: বিদেশী বাংলাদেশী ফুটবলারদের ভূমিকা
বাংলাদেশের ফুটবলের ইতিহাসে নতুন এক দিগন্তের সূচনা হচ্ছে, যেখানে ফুটবলের মান উন্নত করতে বিদেশে থাকা বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ফুটবলারদের জাতীয় দলে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) এখন চেষ্টা করছে দেশের ফুটবলের পারফরম্যান্স আরও উন্নত করার জন্য। এরই অংশ হিসেবে, বিদেশী ফুটবলারদের দেশের জার্সি গায়ে জড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে জামাল ভুইয়া, তারিক কাজীর পর নতুন এক বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত বিদেশী ফুটবলার ফাহমিদুল ইসলামও জাতীয় দলে যোগ দিয়েছেন। তিনি ইতালিতে বেড়ে উঠেছেন এবং ইতালির সিঁড়ির ডিতে ফুটবল খেলেন।
ফাহমিদুল ইসলামের বাংলাদেশে যোগদান
ইতালিতে বেড়ে ওঠা ফাহমিদুল ইসলাম, ১৮ বছর বয়সী এই ফরওয়ার্ড ইতোমধ্যে বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্যাম্পে যোগ দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ দলের কোচ হেভিয়ার কাবরের কৌশলের সঙ্গে মানিয়ে নিতে দুই সপ্তাহ সময় পাচ্ছেন। এর মধ্যে তিনি দলের সঙ্গে ভালোভাবে পরিচিতি পাবেন এবং প্রয়োজনীয় কৌশল ও খেলার ধরন বুঝে নেবেন। জাতীয় ফুটবল দলের ম্যানেজার আমির খান তাকে তাপ্পি দিয়ে বরণ করেছেন।
ফাহমিদুল ইসলাম একজন তরুণ ফুটবলার হিসেবে বড় মঞ্চে পারফর্ম করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তার দেশের জন্য খেলার যে স্বপ্ন, তা অবশেষে বাস্তবে রূপ নিতে চলেছে। কেবল ফাহমিদুলই নয়, এ ধরনের আরও ফুটবলারদের বাংলাদেশে খেলানোর মাধ্যমে ফুটবল ফেডারেশন দেশের ফুটবল খেলার মান আরও উন্নত করতে চান।
বাফুফের পরিকল্পনা এবং বিদেশী ফুটবলারদের অংশগ্রহণ
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) এর লক্ষ্য হল, বিদেশে বসবাসকারী বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ফুটবলারদের জাতীয় দলে অন্তর্ভুক্ত করে দেশের ফুটবলকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া। ২০১৮ সালে জামাল ভুইয়া এবং তারিক কাজী জাতীয় দলে যোগ দেওয়ার পর, ফুটবল দুনিয়ায় নতুন এক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এরা সবাই তাদের নিজ নিজ দেশে পারফর্মিং ফুটবলার, যাদের যোগদান বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে নতুন এক যুগের সূচনা করেছে।
ফাহমিদুল ইসলামের যোগদান, একদিকে যেমন দেশের ফুটবলে নতুন শক্তির যোগান দেয়, তেমনি দলের পারফরম্যান্সে উন্নতির লক্ষণও দেখায়। বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল নানা প্রস্তুতিমূলক ক্যাম্পে ব্যস্ত, যেখানে তারা এশিয়ান কাপের বাছাই পর্বের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিদেশী ফুটবলারদের সমর্থন এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারা যে অভিজ্ঞতা নিয়ে খেলতে আসছেন, তা জাতীয় দলের তরুণদের শেখানোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
হামজা চৌধুরীর যোগদান এবং পরবর্তী পরিকল্পনা
ফাহমিদুল ইসলামের সঙ্গে সঙ্গেই আরও একজন বড় তারকা, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা মিডফিল্ডার হামজা চৌধুরীও বাংলাদেশ দলে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। শেফিল্ড ইউনাইটেডের এই মিডফিল্ডার সম্প্রতি বাংলাদেশ ফুটবল দলে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। হামজা চৌধুরী বর্তমানে ইংল্যান্ডে থাকলেও ১৭ বা ১৮ মার্চে বাংলাদেশ দলের ক্যাম্পে যোগ দেবেন। এর মাধ্যমে তিনি ২৫ মার্চ শ্রীলংকায় এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের তৃতীয় রাউন্ডের ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে খেলার সুযোগ পেতে যাচ্ছেন।
হামজার অন্তর্ভুক্তি দলকে আরও শক্তিশালী করবে, কারণ তিনি প্রিমিয়ার লিগে খেলার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন এবং তার মতো একজন খেলোয়াড় দলের খেলার মানকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে সহায়তা করবেন।
বাংলাদেশ দলের প্রস্তুতি: শ্রীলংকার বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ
বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল বর্তমানে সৌদি আরবে নিবিড় অনুশীলন করছে। ২৫ মার্চ শ্রীলংকায় এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের তৃতীয় রাউন্ডে ভারতের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ খেলতে হবে বাংলাদেশকে। এই ম্যাচটি বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে একটি মাইলফলক হতে পারে। তাই, দলের সকল খেলোয়াড় কঠোর পরিশ্রম করে প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ফাহমিদুল ইসলাম এবং হামজা চৌধুরী মতো তারকা ফুটবলারদের দলে অন্তর্ভুক্তি বাংলাদেশের ফুটবলের উন্নতির প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা বাংলাদেশের ফুটবলকে আন্তর্জাতিক স্তরে আরও শক্তিশালী করবে। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন এই উদ্যোগের মাধ্যমে দলের উন্নতি ও ভবিষ্যতের সফলতার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
সম্ভাবনাময় ভবিষ্যত
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের এই উদ্যোগ দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের ফুটবলকে উন্নত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। জাতীয় দলে বিদেশী বাংলাদেশী ফুটবলারদের অন্তর্ভুক্তি ফুটবল দলের মান বাড়াবে, এবং দেশের যুব ফুটবলারদের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে। ফাহমিদুল ইসলাম ও হামজা চৌধুরী’র মতো ফুটবলাররা প্রমাণ করবে, বিদেশে থাকা বাংলাদেশীরা যদি দেশের জন্য খেলেন, তবে তা বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য অনেক লাভজনক হতে পারে।
ফুটবলের এই নতুন দিগন্ত বাংলাদেশের ফুটবলে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে। দেশের ফুটবল ইতিহাসে বিদেশী বংশোদ্ভূত ফুটবলারদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ এবং তা বাংলাদেশের ফুটবল প্রেমীদের জন্য সুখবর হয়ে আসবে।
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে, ভবিষ্যতে আরও অনেক প্রতিভাবান বিদেশী বাংলাদেশী ফুটবলার জাতীয় দলের জন্য খেলার সুযোগ পাবেন, এবং তারা বাংলাদেশের ফুটবলকে বিশ্বের মানচিত্রে তুলে ধরবেন।