৮ই এপ্রিল, ২০২৫ — আইপিএল ২০২৫-এর ২২তম ম্যাচে পাঞ্জাব কিংস (PBKS) মুখোমুখি হয়েছিল চেন্নাই সুপার কিংসের (CSK) সঙ্গে। মুল্লানপুরে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে পাঞ্জাব কিংস ১৮ রানে হারিয়ে দেয় চেন্নাইকে, যা ছিল তাদের টানা চতুর্থ পরাজয়। তবে এই ম্যাচে আলোচনার কেন্দ্রে ছিলেন ২৪ বছর বয়সী তরুণ প্রিয়াংশ আর্যা, যিনি মাত্র ৩৯ বলে ঝড়ো শতরান করে এক নজিরবিহীন ইনিংস উপহার দেন।
csk vs pbks ইতিহাসে নাম লেখালেন প্রিয়াংশ
আর্যা আইপিএলের ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুত শতরানকারী ভারতীয় (আনক্যাপড) ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করলেন। কেবল ক্রিস গেইল (৩০ বল), ইউসুফ পাঠান (৩৭ বল) ও ডেভিড মিলার (৩৮ বল) আইপিএলে তার চেয়ে কম বলে সেঞ্চুরি করেছেন। মাত্র ১৩তম ওভারে তিনি শতরান পূর্ণ করেন এবং পরের ওভারেই আউট হন ১০৩ রান করে (৪২ বলে)।
ম্যাচের পর পাঞ্জাব কিংসের সহকারী কোচ ব্র্যাড হাডিন জানান, “প্রথম নেট সেশনে ওকে দেখেই বুঝেছিলাম — এই ছেলেটার মধ্যে কিছু বিশেষ আছে।” সেই আস্থা যে ভুল ছিল না, তা মাঠেই প্রমাণ করলেন প্রিয়াংশ। গত বছর দিল্লি প্রিমিয়ার লিগে এক ওভারে ছয়টি ছক্কা মেরে তিনি আলোচনায় এসেছিলেন, আর এবার আইপিএলের মঞ্চে নিজেকে চূড়ান্তভাবে চিনিয়ে দিলেন।
পাঞ্জাবের ইনিংস: প্রিয়াংশ ঝড় ও শশাঙ্কের সমাপ্তি
পাঞ্জাব কিংস প্রথমে ব্যাট করে ৬ উইকেটে ২১৯ রান তোলে। যদিও টপ-অর্ডারের অন্য ব্যাটসম্যানরা খুব একটা ভালো করতে পারেননি (মোট ২৫ বলে মাত্র ৩২ রান), প্রিয়াংশ একাই চালকের আসনে ছিলেন।
শুরুতে ৬ রানে থাকতেই খালিল আহমেদের সহজ ক্যাচ ফেলায় বেঁচে যান তিনি। এরপর আরও একবার, ৩৫ রানে থাকাকালীন বিজয় শঙ্কর ফেলে দেন আরও একটি কঠিন ক্যাচ। এই দুই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আর্যা ঝড় তোলেন চার-ছয়ের বৃষ্টিতে।
আর্যর বিদায়ের পর শশাঙ্ক সিং (৩৬ বলে ৫২*) ও মার্কো জানসেন (১৩ বলে ৩৪*) মিলে সপ্তম উইকেটে ৬৫ রানের জুটি গড়ে দলকে ২১৯-তে নিয়ে যান।
csk vs pbks ব্যর্থতায় ভরা চেন্নাইয়ের ফিল্ডিং
চেন্নাই সুপার কিংস এই ম্যাচে পাঁচটি ক্যাচ ফেলেছে — যার মধ্যে দুটি ছিল আর্যার ইনিংসের সময়। এমন গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে এতগুলো ক্যাচ ফেলে ম্যাচে ফেরা কখনোই সম্ভব নয়। ফিল্ডিংয়ের এই দুর্বলতা চেন্নাইয়ের হারকে আরও সহজ করে তোলে।
রান তাড়ায় ঝলক, তারপর ধস
২২০ রানের বিশাল লক্ষ্যে নেমে চেন্নাই ভালো সূচনা পায়। দেবন কনওয়ে ও রাচিন রবীন্দ্র পাওয়ার প্লেতে ৫৯ রান তোলেন। কিন্তু ইনিংসের মাঝামাঝি এসে রান তোলার গতি ধীর হয়ে যায়।
কনওয়ে ৪৯ বলে ৬৯ রান করে “রিটায়ার্ড আউট” হন, যখন চেন্নাইয়ের দরকার ছিল ১৩ বলে ৪৯ রান। তবে তখন ব্যাটিংয়ে ছিলেন ধোনি ও জাদেজা, কিন্তু তাঁদের ব্যাটে আসেনি সেই কাঙ্ক্ষিত ফিনিশিং টাচ। শেষপর্যন্ত তারা পৌঁছাতে পারে কেবল ২০১-এ, এবং ১৮ রানে হেরে মাঠ ছাড়ে।
csk vs pbks চেন্নাইয়ের চিন্তার বিষয়
এই নিয়ে টানা চার ম্যাচে পরাজিত চেন্নাই। ২০২০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১৮০ প্লাস রান তাড়া করে একটি ম্যাচেও জয় আসেনি তাদের। এই ধারা অব্যাহত থাকলে প্লে-অফের পথ কঠিন হয়ে পড়বে।
বোলিংয়েও চেন্নাইয়ের হতাশাজনক পারফরম্যান্স লক্ষ করা গেছে। একমাত্র রবীন্দ্র জাদেজাই ছিলেন তুলনামূলক নিয়ন্ত্রিত, তিনি ৪ ওভারে মাত্র ৩১ রান দেন। অন্যদিকে রবি অশ্বিনের বিরুদ্ধে আর্যা ১০ বলে ২৮ রান তুলে পুরোপুরি ম্যাচ ছিনিয়ে নেন।
প্রিয়াংশ: নতুন “সেহওয়াগ”?
বামহাতি এই ব্যাটসম্যানের খেলার ধরন অনেকটাই সেহওয়াগের মতো। তিনি বল দেখেন, এবং মারেন — তেমনটাই বলছিলেন বিশ্লেষকরা। একটি ফুলটস বলেও যে ছয় মারা যায়, তা তিনি প্রমাণ করেছেন ম্যাথিশা পাথিরানার একটি দুর্দান্ত ইয়র্কার ব্যর্থ করে।
প্রিয়াংশ বলেছিলেন, “আমি নিজের খেলায় বিশ্বাস করি। সুযোগ পেলে যেন সেটাকে হাতছাড়া না করি — সেটাই মাথায় ছিল।”
উপসংহার
এই ম্যাচটি অনেক কারণেই স্মরণীয়। একদিকে ছিল এক তরুণ প্রতিভার সেঞ্চুরি ঝড়, অন্যদিকে ছিল একটি সফল ফ্র্যাঞ্চাইজির অব্যাহত ব্যর্থতা। চেন্নাই সুপার কিংসের মতো দলের জন্য এই পরাজয় চিন্তার কারণ হলেও, পাঞ্জাব কিংস ও তাদের সমর্থকদের জন্য এটি এক নতুন স্বপ্নের শুরু।
প্রিয়াংশ আর্যা যদি এই ফর্ম ধরে রাখতে পারেন, তাহলে ভারতীয় ক্রিকেট পাবে আরও এক তীব্র ও সাহসী ব্যাটসম্যান, যিনি ভবিষ্যতে জাতীয় দলে আলো ছড়াতে পারেন।