অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটের জন্য এক বড় ধাক্কা! ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ICC Champion Trophy থেকে সরে দাঁড়ালেন তারকা পেসার Mitchel Stark বুধবার চূড়ান্ত দল ঘোষণা করেছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া, যেখানে স্টার্কের নাম নেই। স্টার্কের সরে দাঁড়ানোর কারণ এখনও পরিষ্কার নয়, তবে এটি অস্ট্রেলিয়ার পেস আক্রমণে বড় রকমের প্রভাব ফেলতে পারে।
স্টার্কের(Mitchel Stark) না খেলার কারণ কী?
৩৫ বছর বয়সি এই তারকা পেসার কেন টুর্নামেন্ট থেকে সরে গেলেন, সে বিষয়ে সরাসরি কিছু জানাননি। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়াও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো কারণ জানায়নি। তবে প্রধান নির্বাচক জর্জ বেইলি জানিয়েছেন, “আমরা মিচেল স্টার্কের সিদ্ধান্তকে সম্মান করি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার অবদান অসামান্য। দীর্ঘদিন ধরে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলে সে অনেক প্রতিকূলতা অতিক্রম করেছে। তার অভাব দল অনুভব করবে, তবে এটি অন্যদের জন্য সুযোগ তৈরি করবে।”
অস্ট্রেলিয়ার পেস বোলিং সংকট
স্টার্কের আগে প্যাট কামিন্স এবং জশ হ্যাজেলউডও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছেন। এই দুই পেসার চোটের কারণে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না। ফলে অস্ট্রেলিয়ার প্রধান তিন পেসার ছাড়াই মাঠে নামতে হবে দলটিকে। এছাড়াও, চোটের কারণে দলে নেই মিচেল মার্শ।
এদিকে, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শুরু হওয়ার আগেই ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন অলরাউন্ডার মার্কাস স্টোইনিস। ফলে তাকে এই টুর্নামেন্টে দলে রাখা হয়নি।
নেতৃত্বে স্টিভ স্মিথ(Steve Smith)
এই পরিস্থিতিতে অস্ট্রেলিয়ার নেতৃত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে স্টিভ স্মিথের কাঁধে। সাধারণ পরিস্থিতিতে প্যাট কামিন্সই অধিনায়কত্ব করতেন, কিন্তু তার অনুপস্থিতিতে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া স্মিথের উপর আস্থা রেখেছে। এর আগে ২০১৫ সালে বিশ্বকাপজয়ী দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন স্মিথ এবং অধিনায়ক হিসেবেও যথেষ্ট অভিজ্ঞ।
স্টার্কের না থাকা কতটা বড় ধাক্কা?
মিচেল স্টার্কের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে না থাকাটা নিঃসন্দেহে অস্ট্রেলিয়ার জন্য বড় ধাক্কা। গত এক দশকে অস্ট্রেলিয়ার ওয়ানডে ফরম্যাটের অন্যতম সফল পেসার তিনি। আইসিসির টুর্নামেন্টগুলোতে তার পারফরম্যান্স সবসময়ই নজরকাড়া।
২০১৫ বিশ্বকাপে ২২ উইকেট নিয়ে প্রতিযোগিতার সেরা খেলোয়াড় হয়েছিলেন স্টার্ক। ২০১৯ বিশ্বকাপেও ২৭ উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী ছিলেন তিনি। এই রেকর্ডই প্রমাণ করে যে বড় মঞ্চে স্টার্ক কতটা কার্যকরী।
তার না থাকায় দলের পেস আক্রমণে বড় শূন্যতা তৈরি হয়েছে। অভিজ্ঞতার অভাবে অস্ট্রেলিয়ার তরুণ পেসারদের জন্য এটি কঠিন চ্যালেঞ্জ হতে পারে।
অস্ট্রেলিয়া দলে কারা আছেন?
আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অস্ট্রেলিয়া দল:
- স্টিভ স্মিথ (অধিনায়ক)
- শন অ্যাবট
- অ্যালেক্স কেরি
- বেন ডোয়ারশুইস
- নাথান এলিস
- জেক ফ্রেজার-ম্যাকগার্ক
- অ্যারন হার্ডি
- ট্রেভিস হেড
- জশ ইনগ্লিস
- স্পেনসার জনসন
- মার্নাস লাবুশেন
- গ্লেন ম্যাক্সওয়েল
- তানভীর সাংঘা
- ম্যাথু শর্ট
- অ্যাডাম জাম্পা
রিজার্ভ সদস্য হিসেবে দলের সঙ্গে পাকিস্তানে যাবেন কুপার কনোলি।
অস্ট্রেলিয়ার সামনে বড় চ্যালেঞ্জ
স্টার্ক, কামিন্স, হ্যাজেলউডের মতো সিনিয়রদের না থাকায় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অস্ট্রেলিয়ার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। তরুণ বোলারদের নিজেদের প্রমাণ করতে হবে এবং অধিনায়ক স্মিথকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে। দলের মূল ভরসা হবে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানরা এবং ম্যাক্সওয়েলের মতো অলরাউন্ডাররা।
আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে মিচেল স্টার্কের পারফরম্যান্স
মিচেল স্টার্ক আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে কয়েকবার অংশ নিয়েছেন এবং তার বিধ্বংসী পেস বোলিংয়ের জন্য সবসময় আলোচনায় ছিলেন। আসুন দেখে নেওয়া যাক তিনি এই টুর্নামেন্টে কীভাবে পারফর্ম করেছেন
২০১৩ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি
আয়োজক: ইংল্যান্ড ও ওয়েলস
অস্ট্রেলিয়ার পারফরম্যান্স: গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায়
মিচেল স্টার্ক খুব বেশি ম্যাচ খেলতে পারেননি এই টুর্নামেন্টে। চোটের কারণে তিনি মাত্র একটি ম্যাচে খেলেন এবং উইকেটশূন্য ছিলেন।
২০১৭ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি
আয়োজক: ইংল্যান্ড ও ওয়েলস
অস্ট্রেলিয়ার পারফরম্যান্স: গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় (বৃষ্টি-বিঘ্নিত টুর্নামেন্ট)
স্টার্ক তিনটি ম্যাচ খেলেছিলেন এবং ৩ উইকেট নিয়েছিলেন।
তার সেরা স্পেল ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২/৩৪।
এই টুর্নামেন্টে অস্ট্রেলিয়া বৃষ্টির কারণে বেশিরভাগ ম্যাচই শেষ করতে পারেনি, ফলে স্টার্কের বেশি সুযোগ পাওয়া হয়নি।
স্টার্কের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মোট পরিসংখ্যান
মোট ম্যাচ: ৪
মোট উইকেট: ৩
সেরা বোলিং: ২/৩৪ (দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে, ২০১৭)
ইকোনমি রেট: ৫.০০ (প্রায়)
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে স্টার্ক কেন সফল হননি?
কম ম্যাচ খেলার সুযোগ – ২০১৩ সালে তিনি ইনজুরির কারণে মাত্র ১টি ম্যাচ খেলেন এবং ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার ২টি ম্যাচই বৃষ্টিতে ধুয়ে যায়।
অস্ট্রেলিয়ার দুর্বল পারফরম্যান্স – দুই আসরেই অস্ট্রেলিয়া গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে যায়, ফলে স্টার্কের জন্য পারফর্ম করার সুযোগ কম ছিল।
মিচেল স্টার্কের কিছু বড় রেকর্ড
অস্ট্রেলিয়ার বাঁহাতি পেসার মিচেল স্টার্ক আধুনিক ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ফাস্ট বোলার। তার গতিময় বোলিং, নিখুঁত ইয়র্কার এবং গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে পারফর্ম করার ক্ষমতা তাকে বিশ্ব ক্রিকেটের সেরা বোলারদের একজন করে তুলেছে। আসুন তার কিছু বড় রেকর্ড দেখে নেওয়া যাক
১. বিশ্বকাপে সর্বাধিক উইকেট শিকারী (এক আসরে)
২০১৯ আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপে স্টার্ক ২৭ উইকেট নেন, যা কোনো একক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ। এর আগে এই রেকর্ড ছিল গ্লেন ম্যাকগ্রার (২৬ উইকেট, ২০০৭ বিশ্বকাপ)।
২. দ্রুততম ১৫০ ওডিআই উইকেট
স্টার্ক মাত্র ৭৭ ম্যাচে ১৫০ ওয়ানডে উইকেট নেন, যা ইতিহাসের দ্রুততম!
৩. বিশ্বকাপে ৫০ উইকেটের মালিক
তিনি মাত্র ১৯টি বিশ্বকাপ ম্যাচে ৫০ উইকেট নিয়েছেন, যা সবচেয়ে কম ম্যাচে বিশ্বকাপে এই মাইলফলকে পৌঁছানোর রেকর্ড।
৪. এক বিশ্বকাপে দুটি পাঁচ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড
২০১৫ বিশ্বকাপে স্টার্ক দুটি ম্যাচে ৫ উইকেট নিয়ে ইতিহাস গড়েন।
৫. এক ইনিংসে ৬ উইকেট নেওয়ার কীর্তি
২০১৫ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র ২৮ রানে ৬ উইকেট নেন, যা বিশ্বকাপ ইতিহাসের অন্যতম সেরা স্পেল।
৬. অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ টি-টোয়েন্টি উইকেটশিকারী
তিনি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহকদের একজন, প্যাট কামিন্সের ঠিক পরেই।
৭. লাল এবং সাদা বল দুই ফরম্যাটেই সফল
স্টার্ক টেস্ট, ওডিআই এবং টি-টোয়েন্টিতে সমানভাবে সফল এবং তিনি অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম বিশ্বস্ত বোলার।
শেষ কথা
মিচেল স্টার্কের হঠাৎ সরে দাঁড়ানোর কারণে ক্রিকেটবিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। তার সিদ্ধান্তের প্রকৃত কারণ অজানা থাকলেও, এটি স্পষ্ট যে তার অনুপস্থিতি অস্ট্রেলিয়ার জন্য বড় ধাক্কা। তবে, এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই স্মিথের নেতৃত্বে দলকে এগিয়ে যেতে হবে। এখন দেখার বিষয়, তরুণ পেসাররা এই সুযোগ কতটা কাজে লাগাতে পারে!