উপসংহার(Summary)
মালদা বিমানবন্দর চালুর জন্য দীর্ঘদিন ধরেই স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা দাবি জানিয়ে আসছেন। রাজ্য সরকারও এই বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। যদিও নানা সমস্যার কারণে এখনো বিমান পরিষেবা চালু হয়নি, তবে বর্তমান পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৫ সালের মধ্যেই এটি বাস্তবায়িত হতে পারে। নতুন বিমানবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনাও ভবিষ্যতের জন্য আশার আলো দেখাচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাংশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জেলা মালদা। এটি শুধুমাত্র ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে সমৃদ্ধ নয়, অর্থনৈতিকভাবেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে আম ও রেশম শিল্পের জন্য বিখ্যাত এই জেলা ব্যবসায়ীদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। দীর্ঘদিন ধরেই মালদায় বিমানবন্দর চালুর দাবি উঠছে, কিন্তু নানা কারণে এটি এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এই বিমানবন্দর চালুর সম্ভাবনা আবারো উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।
মালদা বিমানবন্দরের ইতিহাস
১৯৮৬ সাল পর্যন্ত মালদা বিমানবন্দরটি সক্রিয় ছিল। সেই সময় এখানে ১৮ আসনের ছোট বিমান ওঠানামা করত। তবে পরে এটি বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৭ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার মালদা বিমানবন্দর পুনরায় চালুর জন্য বেশ কিছু পরিকল্পনা নেয় এবং রানওয়ে নির্মাণের জন্য প্রায় ১৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করে। কিন্তু পরিকাঠামোগত সীমাবদ্ধতার কারণে বিমান পরিষেবা চালু করা সম্ভব হয়নি।
বর্তমান পরিস্থিতি
বর্তমানে মালদা বিমানবন্দরের অবস্থা যথেষ্ট জটিল। একদিকে পরিকাঠামো উন্নয়ন কাজ প্রায় শেষ হলেও, বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা এখনো গড়ে ওঠেনি। উদাহরণস্বরূপ, পার্কিং জোন, যাত্রী প্রতীক্ষালয়, শৌচাগার, অফিস ঘর, দমকল কেন্দ্র ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো এখনো তৈরি করা হয়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিমানবন্দরটি কার্যকর করার জন্য আরো প্রায় ১০ কোটি টাকা প্রয়োজন।
এছাড়াও, বিমানবন্দরটির চারপাশে বহুতল ভবন ও হোটেল গড়ে ওঠায় বড় উড়ানের জন্য প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণে সমস্যা দেখা দিয়েছে। রানওয়ে সম্প্রসারণের জায়গা না থাকায় বড় বিমান এখানে নামতে পারবে না। ফলে শুধুমাত্র ছোট বিমান চালুর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
নতুন বিমানবন্দর স্থাপনের পরিকল্পনা
বর্তমান বিমানবন্দরটি বড় বিমান ওঠানামার জন্য উপযুক্ত নয় বলে রাজ্য সরকার মালদার গাজল এলাকায় নতুন বিমানবন্দর গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছে। বর্তমানে জমি চিহ্নিতকরণের কাজ চলছে। নতুন বিমানবন্দর নির্মিত হলে উত্তরবঙ্গের যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক সহজ হয়ে যাবে।
কবে চালু হতে পারে মালদা বিমানবন্দর পরিষেবা?
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে জানা যায়, মালদা থেকে কলকাতা পর্যন্ত ১৯ আসনের ছোট বিমান পরিষেবা শুরু করার জন্য প্রায় ১৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মতে, যদি সবকিছু পরিকল্পনামাফিক হয়, তবে চলতি বছরের মধ্যেই এই পরিষেবা শুরু হতে পারে।
বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলি ইতিমধ্যেই এই বিমানবন্দর ব্যবহারের বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য বেশ কয়েকটি সরকারি পরিদর্শন প্রয়োজন। আশা করা হচ্ছে, ২০২৫ সালের শেষের দিকেই মালদা বিমানবন্দর আংশিকভাবে হলেও চালু করা সম্ভব হবে।
মালদা বিমানবন্দর চালুর গুরুত্ব
১. ব্যবসায়িক সুবিধা: মালদা পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম ব্যবসায়িক কেন্দ্র। আম ও রেশম শিল্পের কারণে এখানকার ব্যবসায়ীদের কলকাতা, দিল্লি ও মুম্বাইয়ের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হয়। বিমান পরিষেবা চালু হলে এই ব্যবসার প্রসার অনেক সহজ হবে।
- পর্যটন শিল্পের বিকাশ: মালদা একটি ঐতিহাসিক স্থান। এখানে গৌড় ও পান্ডুয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। বিমান পরিষেবা চালু হলে পর্যটকদের আসা-যাওয়া অনেক সহজ হবে।
- চিকিৎসা পরিষেবা: মালদা থেকে কলকাতা বা অন্য বড় শহরে চিকিৎসার জন্য বহু মানুষ যেতে হয়। বিমান পরিষেবা চালু হলে জরুরি অবস্থায় রোগীদের দ্রুত কলকাতা বা অন্যত্র নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।
মালদা বিমানবন্দরের বর্তমান অবস্থা
-
পরিকাঠামোগত উন্নয়ন:
- নতুন রানওয়ে নির্মিত হয়েছে, তবে সেটি বড় উড়ানের উপযোগী নয়।
- যাত্রীদের জন্য প্রয়োজনীয় সুবিধা যেমন পার্কিং, টার্মিনাল ভবন, দমকল কেন্দ্র, নিরাপত্তা ব্যবস্থা এখনো সম্পূর্ণ হয়নি।
- বিমানবন্দরের আশেপাশে বহুতল নির্মাণ হওয়ায় বড় উড়ান চালানোর ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
-
সরকারি পদক্ষেপ:
- কেন্দ্রীয় বাজেটে দেশের ১২০টি বিমানবন্দরের সংস্কার ও উন্নয়নের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
- রাজ্য সরকার ও জেলা প্রশাসন বিমানবন্দর চালুর জন্য অর্থ বরাদ্দ চেয়ে অনুরোধ জানিয়েছে।
- কিছু জায়গায় জমি সংক্রান্ত সমস্যা থাকলেও নতুন করে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা চলছে।
-
উড়ান পরিষেবা চালুর সম্ভাবনা:
- শুধুমাত্র ছোট বিমান (১৯-৩০ আসনের) পরিষেবা চালুর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
- প্রাথমিকভাবে কলকাতা-মালদা রুট চালু হতে পারে।
- সরকারি অনুমোদন ও পরিদর্শন সম্পন্ন হলে ২০২৫ সালের মধ্যে পরিষেবা শুরু হতে পারে।
চ্যালেঞ্জ ও সমাধান
১. জমি অধিগ্রহণ: বিমানবন্দর সম্প্রসারণের জন্য জমি অধিগ্রহণ সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। স্থানীয়দের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করা জরুরি।
২. অর্থায়ন: পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য অতিরিক্ত ১০-১৫ কোটি টাকা প্রয়োজন, যা সরকার ও বেসরকারি বিনিয়োগের মাধ্যমে দ্রুত বরাদ্দ করা দরকার।
৩. নিরাপত্তা ও পরিকাঠামো: বিমানবন্দরের নিরাপত্তা, রানওয়ে শক্তিশালীকরণ ও অন্যান্য সুবিধার দ্রুত বাস্তবায়ন করা দরকার।
বর্তমানে মালদা বিমানবন্দর শুধুমাত্র হেলিকপ্টার পরিষেবার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে কেন্দ্রীয় বাজেটের নতুন পরিকল্পনার ফলে এটি পুনরায় চালুর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সরকার ও সংশ্লিষ্ট দফতর দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা নিলে, মালদাবাসীর বহুদিনের স্বপ্ন শীঘ্রই বাস্তব হতে পারে।এখন দেখার বিষয়, সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কীভাবে দ্রুত এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করে এবং মালদার মানুষদের বহুদিনের স্বপ্নকে সত্যি করে তোলে।
read more:
UPSC Result 2024: আবারো UPSC পরীক্ষায় বাজিমাত করলো বাংলা