মার্চে পাকিস্তানের মৃত্যুযুদ্ধ: বালুচিস্তান হামলা, আবু কাতালের রহস্য ও ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার নতুন মোড়

pakistan balochistan dead case

পাকিস্তানের মার্চ মাসের দুঃসময়: বালুচিস্তান হামলা, আবু কাতালের মৃত্যু ও আঞ্চলিক উত্তেজনা

২০২৪ সালের মার্চ মাসটি পাকিস্তানের জন্য একের পর এক সংকট বয়ে এনেছে। বালুচিস্তান লিবারেশন আর্মির (বিএলএ) হামলা, জাতিসংঘ-নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী হাফিজ সইদের সহযোগী আবু কাতালের হত্যাকাণ্ড এবং ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের নতুন করে উত্তপ্ত হওয়া—এই ঘটনাগুলো আন্তর্জাতিক স্তরে পাকিস্তানের ভঙ্গুর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও সন্ত্রাসবাদের সাথে তাদের দ্বিচারিতামূলক নীতিকে উন্মোচিত করেছে। এই প্রতিবেদনে আমরা এই ঘটনাগুলোর গভীরে গিয়ে কারণ, প্রভাব এবং ভবিষ্যতের সম্ভাব্য পরিণতি বিশ্লেষণ করব।

বালুচিস্তান হামলা: বিএলএ-এর প্রতিশোধ ও পাকিস্তানের অপমান

জাফর এক্সপ্রেসে সংঘটিত হামলায় বালুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) ২০০-এরও বেশি পাকিস্তানি সেনা সদস্যকে হত্যার দাবি করেছে। এই হামলা কেবল একটি সামরিক আঘাতই নয়, বরং পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে বালুচ জাতীয়তাবাদীদের দীর্ঘদিনের ক্ষোভের প্রকাশ।

বিএলএ-এর ইতিহাস ও লক্ষ্য
বালুচিস্তান লিবারেশন আর্মি ২০০০ সালের শুরুর দিকে গঠিত হয়েছিল পাকিস্তানের বালুচিস্তান প্রদেশের স্বাধীনতার দাবিতে। বালুচ জনগণ দাবি করে আসছে যে পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকার তাদের সম্পদ শোষণ করছে এবং রাজনৈতিকভাবে তাদের উপেক্ষা করা হয়েছে। বিএলএ-এর সাম্প্রতিক হামলাগুলো এই অসমতার বিরুদ্ধে তাদের প্রতিবাদেরই অংশ। ২০১৮ সালে চীনা প্রকৌশলীদের ওপর হামলা এবং ২০২২ সালে কোয়েটার সেনা ক্যাম্পে আক্রমণ তাদের তৎপরতার উল্লেখযোগ্য উদাহরণ।

পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া
এই হামলার পর পাকিস্তান সেনাবাহিনী বালুচিস্তানে ব্যাপক অভিযান চালিয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে ৫০-এরও বেশি সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার বা নিহত করা হয়েছে। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলি অভিযোগ করছে যে এই অভিযানে নিরীহ বালুচ নাগরিকরাও আক্রান্ত হচ্ছেন।


আবু কাতাল: লস্কর-ই-তৈবার ছায়াসঙ্গী

আবু কাতাল, যার প্রকৃত নাম জিয়া উর রহমান, লস্কর-ই-তৈবার (LeT) নেতা হাফিজ সইদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ)-এর মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় থাকা এই সন্ত্রাসী ভারতের বিরুদ্ধে একাধিক হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে চিহ্নিত।

ভারতের বিরুদ্ধে তার ভূমিকা

  • রাইসি হামলা (২০২৩): জম্মু-কাশ্মীরের রাইসি জেলায় হিন্দু তীর্থযাত্রীদের ওপর গুলিবর্ষণ করে ৯ জনকে হত্যা করা হয়। এই হামলার নির্দেশনা দিয়েছিলেন আবু কাতাল।
  • মুম্বাই হামলার সাথে সংযোগ: গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার পরিকল্পনায়ও তার সম্পৃক্ততা ছিল।
  • জৈশ-ই-মুহাম্মদকে সমর্থন: তিনি পাকিস্তান-ভিত্তিক জৈশ-ই-মুহাম্মদ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকেও অর্থ ও অস্ত্র সরবরাহ করতেন।

মৃত্যুর রহস্য
ঝিলামে অজ্ঞাত আক্রমণকারীদের গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনায় পাকিস্তান অভ্যন্তরীণভাবে তদন্ত শুরু করেছে। স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, আবু কাতালের গাড়িটি ২০টি গুলির শিকার হয়েছিল। এই হামলাকে অনেকেই ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা র (রॉ) এর সাফল্য বলে মনে করছেন।


ভারত-পাকিস্তান: অশান্ত সম্পর্কের নতুন অধ্যায়

আবু কাতালের মৃত্যু ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে নতুন করে উত্তাপ সৃষ্টি করেছে। পাকিস্তান এই হামলার জন্য ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাকে দায়ী করলেও, ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি।

ভারতের প্রতিরক্ষা নীতির পরিবর্তন
২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর ভারতের প্রতিরক্ষা নীতি স্পষ্টভাবে পাল্টেছে। “সন্ত্রাসীদের তাদের ঘাঁটিতেই নিশ্চিহ্ন করা” এই নীতির অংশ হিসেবে:

  • সurgical Strikes (২০১৬): পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে সন্ত্রাসী ক্যাম্পে হামলা।
  • বালাকোট এয়ার স্ট্রাইক (২০১৯): জৈশ-ই-মুহাম্মদের ক্যাম্প ধ্বংস।
  • হাইব্রিড যুদ্ধের কৌশল: সাইবার যুদ্ধ ও গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো।

পাকিস্তানের অভিযোগ ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
পাকিস্তান বারবার জাতিসংঘে ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স, পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ২০২৩ সালে FATF (ফাইনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স) পাকিস্তানকে “গ্রে লিস্ট” থেকে সরালেও, সন্ত্রাসী অর্থায়ন রোধে তাদের প্রচেষ্টা এখনো প্রশ্নের মুখে।


পাকিস্তানের দ্বিচারিতা: সন্ত্রাসের সাথে ‘গেম অব থ্রোনস’

পাকিস্তানের বৈদেশিক নীতিতে সন্ত্রাসবাদ একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আফগানিস্তানভিত্তিক গবেষণা সংস্থা “আমু”-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাকিস্তান সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর সাথে দ্বিমুখী সম্পর্ক বজায় রেখেছে:

  • পশ্চিমাদের তুষ্ট করতে: আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনের আত্মসমর্পণ (২০১১) বা হাফিজ সইদের গ্রেপ্তার (২০২০)।
  • অভ্যন্তরীণ স্বার্থে: লস্কর-ই-তৈবা, জৈশ-ই-মুহাম্মদকে প্রশ্রয় দেওয়া।

আফগানিস্তানের ক্ষোভ
আফগান নেতারা বারবার অভিযোগ করেছেন যে পাকিস্তান তালেবান ও হক্কানি নেটওয়ার্ককে সমর্থন দিয়ে আসছে। আফগান সাংবাদিক নাসরুল্লাহ স্তানিকজাইয়ের মতে, “পাকিস্তানের ISI (ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স) কখনোই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সত্যিকারের যুদ্ধে নামেনি। তাদের লক্ষ্য কেবল আফগানিস্তান ও ভারতকে অস্থিতিশীল রাখা।”


আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে পাকিস্তানের বিচ্ছিন্নতা

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে পাকিস্তান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিচ্ছিন্নতার শিকার হচ্ছে:

  • মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব হ্রাস: সৌদি আরব ও UAE ভারতের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করছে।
  • চীনের সীমিত সমর্থন: CPEC (চীন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর) প্রকল্পে বিলম্ব ও অর্থনৈতিক সংকট।
  • যুক্তরাষ্ট্রের অসন্তুষ্টি: আফগানিস্তান থেকে মার্কিন প্রত্যাহারের পর পাকিস্তানের কৌশলগত গুরুত্ব কমেছে।

ট্রাম্পের বিতর্কিত মন্তব্য
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “পাকিস্তান আমাদের সাথে ভালো সহযোগিতা করেছে।” এই মন্তব্য ভারত ও আফগানিস্তানে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের এই বক্তব্য আফগান যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের ভূমিকাকে সাময়িকভাবে স্বীকৃতি দিলেও, বাস্তবে পাকিস্তানের দ্বিচারিতা আমেরিকার নীতিনির্ধারকদের হতাশ করেছে।


যুবশক্তির উন্নয়ন: করিয়ার ২৪৭-এর ডেটা সায়েন্স কোর্স

রাজনৈতিক সংকটের মধ্যেও দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে যুবসমাজকে এগিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে করিয়ার ২৪৭। তাদের নতুন “ডেটা সায়েন্স এন্ড মেশিন লার্নিং উইথ জেনারেটিভ এআই” কোর্সটি যুবকদের জন্য একটি অনন্য সুযোগ।

কোর্সের বৈশিষ্ট্য

  1. লাইভ ক্লাস: আইআইটি ও আইআইএসসি-র প্রাক্তন শিক্ষকদের সরাসরি মেন্টরশিপ।
  2. প্রজেক্ট-ভিত্তিক শেখা: রিয়েল-টাইম ডেটা এনালিসিস, এআই মডেল বিল্ডিং।
  3. জব গ্যারান্টি: Amazon, Flipkart, টাটা গ্রুপের মতো কোম্পানিগুলোতে প্লেসমেন্ট সুযোগ।

কেন এই কোর্স গুরুত্বপূর্ণ?

  • মার্কেট ডিমান্ড: ভারতে ডেটা সায়েন্টিস্টের চাহিদা প্রতি বছর ৪০% হারে বাড়ছে।
  • বেতন: ফ্রেশারদের জন্য গড় বেতন ৭-৯ লাখ টাকা।
  • জেনারেটিভ এআই-এর ভবিষ্যৎ: ChatGPT, DALL-E-এর মতো টুলসের ব্যবহার শেখানো হয়।

রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া
আগ্রহীরা P10 কোড ব্যবহার করে ১০% ছাড়ে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। কোর্সের বিস্তারিত জানতে করিয়ার ২৪৭-এর ওয়েবসাইটে যোগাযোগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।


 সময়ের দাবি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্য ও যুবশক্তির ক্ষমতায়ন

পাকিস্তানের বর্তমান সংকট কেবল একটি দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যর্থতা নয়, বরং বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় আমাদের সম্মিলিত ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি। আবু কাতালের মৃত্যু ও বালুচিস্তান হামলা প্রমাণ করে যে সন্ত্রাসবাদ কোনো একটি দেশের সমস্যা নয়—এটি সমগ্র মানবতার শত্রু।

অন্যদিকে, করিয়ার ২৪৭-এর মতো উদ্যোগগুলি যুবসমাজকে ডিজিটাল যুগের জন্য প্রস্তুত করছে। ডেটা সায়েন্স ও এআই-এর মতো ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন শুধু ব্যক্তিগত ক্যারিয়ারই নয়, জাতীয় অর্থনীতির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।

চূড়ান্ত বার্তা: সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা এবং প্রযুক্তিনির্ভর ভবিষ্যৎ গঠন—এই দুই মোর্চাতেই জয়লাভ করাই একবিংশ শতাব্দীর মূল চ্যালেঞ্জ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *