বালুরঘাট বিমানবন্দর: একটি পরিচিতি
বালুরঘাট বিমানবন্দর (IATA: RGH, ICAO: VEBG) পশ্চিমবঙ্গের বালুরঘাট শহরের ৬ কিলোমিটার (৪ মাইল) এবং গঙ্গারামপুর শহর থেকে ৩৪ কিলোমিটার (২১ মাইল) দূরে অবস্থিত। যদিও এটি এক সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দর ছিল, বর্তমানে এটি চালু নেই।
বিমানবন্দরের বিস্তারিত তথ্য:
- ধরণ: পাবলিক
- মালিক: ভারতের বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ
- অপারেটর: ভারতের বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ
- উচ্চতা (AMSL): ৭৮ ফুট / ২৪ মিটার
- স্থানাঙ্ক: ২৫°১৫’৪২” উত্তর, ৮৮°৪৭’৪৪” পূর্ব
রানওয়ে:
- দিকনির্দেশনা: ২৭/০৯
- দৈর্ঘ্য: ৪,৯০৬ ফুট / ১,৪৯৫ মিটার
- পৃষ্ঠতল: বাঁধানো
বালুরঘাট বিমানবন্দর: ইতিহাস এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বালুরঘাট বিমানবন্দর, যা পশ্চিমবঙ্গের বালুরঘাট শহরের ৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, এক সময় গুরুত্বপূর্ণ সামরিক এবং বেসামরিক বিমান চলাচলের কেন্দ্র ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ বিমান বাহিনী এখানে একটি অস্থায়ী বিমানবন্দর প্রতিষ্ঠা করেছিল। পরবর্তীতে, ১৯৫০-এর দশকে সুরেখা বিমান পরিষেবা এখানে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করেছিল, তবে ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের কারণে এটি বন্ধ হয়ে যায়।
১৯৮৪ সালে আবারও বালুরঘাট বিমানবন্দরটি বায়ুদূত বিমান পরিষেবার আওতায় ছিল, কিন্তু নেভিগেশন সিস্টেমের অভাব, যাত্রী সংকট এবং আর্থিক সমস্যার কারণে পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
২০১৮ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার বালুরঘাট বিমানবন্দর থেকে বিমান পরিষেবা চালু করার উদ্যোগ নেয়। সরকারের পক্ষ থেকে প্রায় ১১.৩৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে বিমান স্ট্রিপের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের জন্য। এতে যাত্রীদের জন্য বিশ্রামাগার, বিমান পরিবহন, ক্রু ও পাইলটদের বিশ্রামাগার, রেস্তোরাঁ এবং রিফ্রেশমেন্ট কাউন্টারসহ অন্যান্য সুবিধা অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
এখন বিমানবন্দরটি ভারতীয় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের পরিদর্শন শেষ হয়েছে, এবং অনুমোদন প্রক্রিয়া চলছে। ফলে, ভবিষ্যতে এটি পুনরায় চালু হতে পারে, যা বালুরঘাট এবং তার আশপাশের অঞ্চলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ মাধ্যম হয়ে উঠবে।
২০২৫ সালে বালুরঘাট বিমানবন্দর চালু
বালুরঘাট বিমানবন্দর পশ্চিমবঙ্গের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দর, যা দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। যদিও পরিকাঠামো অনেক আগেই প্রস্তুত হয়েছিল, তবে বিমানের ওঠানামার কার্যক্রম শুরু হয়নি এবং রানওয়ে জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। অবহেলার কারণে এই বিমানবন্দরটি এখনও কার্যকর হয়নি, যা স্থানীয়দের জন্য এক বড় দুর্ভোগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সুকান্ত মজুমদারের নতুন উদ্যোগ
বালুরঘাটের সাংসদ ও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার ২০২৫ সালে বিমানবন্দরটি চালু করার জন্য আরও একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। তিনি কেন্দ্রীয় সিভিল অ্যাভিয়েশন মন্ত্রী কিঞ্জরাপু রামমোহন নাইডু-এর কাছে নতুন প্রস্তাব পাঠিয়ে বালুরঘাট বিমানবন্দর চালু করার দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, কোচবিহার থেকে বালুরঘাট হয়ে কলকাতা অথবা গুয়াহাটি থেকে কোচবিহার, বালুরঘাট হয়ে কলকাতা পর্যন্ত বিমান পরিষেবা চালু করা উচিত, যা এই অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে অনেক সহজ করে দেবে।
সুকান্ত মজুমদারের প্রতিশ্রুতি
সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, “বালুরঘাট বিমানবন্দর চালু করা সম্ভব এবং আমি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামমোহন নাইডু ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মিটিংয়ে বসে এই ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেব।” তিনি আরো বলেন, “রাজ্য চিফ সেক্রেটারির সঙ্গে কথা বলে আমরা বিমানবন্দর চালুর জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাব।”
২০১৬ সালে শুরু হয় সংস্কার
২০১৬ সালে, পূর্ত দপ্তর বিমানবন্দরটির রানওয়ে এবং অন্যান্য অবকাঠামো পুনর্নির্মাণের কাজ শুরু করে। প্রথমে ১১ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে বিমানবন্দরটির রানওয়ে, প্যাসেঞ্জার লাউঞ্জ, এয়ার ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণ এবং অন্যান্য সুবিধা পুনঃস্থাপন করা হয়। কয়েক বছর আগে কাজটি শেষ হয়ে যাওয়ার পর, ২০২২ সালে এয়ারপোর্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়া এবং রাজ্যের পরিবহণ দপ্তরের কর্মকর্তারা পরিদর্শন করেন এবং বিমানবন্দরের ১৩৮০ মিটার রানওয়েকে ১৮০০ মিটার করতে পুনর্নির্মাণ করেন।
বালুরঘাট বিমানবন্দর: বর্তমান অবস্থা
বর্তমানে বালুরঘাট বিমানবন্দর অবকাঠামোগত দিক থেকে প্রস্তুত হলেও বিমান চলাচল এখনও শুরু হয়নি। ২০১৬ সালে পূর্ত দপ্তর এর সংস্কার কাজ শুরু করার পর, বিমানবন্দরটির রানওয়ে, প্যাসেঞ্জার লাউঞ্জ, এবং অন্যান্য সুবিধা উন্নত করা হয়েছে। রানওয়েটি ১৩৮০ মিটার থেকে ১৮০০ মিটার করা হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় বিমান চলাচলের পরিকাঠামোও স্থাপন করা হয়েছে।
অবকাঠামো এবং পরিকাঠামো
বালুরঘাট বিমানবন্দর বর্তমানে একটি উন্নতমানের অবকাঠামো সম্পন্ন, যেখানে রয়েছে এক বিশাল রানওয়ে (১৮০০ মিটার), এয়ার স্ট্রিপ, প্যাসেঞ্জার লাউঞ্জ, এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল ব্যবস্থা এবং অন্যান্য সুবিধা। এই সবকিছুই বিমান চলাচল শুরু করার জন্য প্রস্তুত। বালুরঘাট জেলা প্রশাসন এবং রাজ্য সরকার এর ওপর গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে যাতে বিমান পরিষেবা দ্রুত চালু করা সম্ভব হয়।
কেন্দ্রীয় অনুমোদন
যদিও বিমানবন্দরের অবকাঠামো প্রায় সম্পূর্ণ, তবে কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন ছিল না। দীর্ঘসময় ধরে এয়ারপোর্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়া এবং রাজ্যের পরিবহণ দপ্তরের কর্মকর্তারা এখানে পরিদর্শন করে কিছু প্রযুক্তিগত এবং অনুমোদনজনিত সমস্যার কথা জানিয়েছেন। তবে, বর্তমানে জানা গেছে যে, এসব সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে এবং বিমান চলাচল শীঘ্রই শুরু হতে পারে।
জেলা প্রশাসনের উদ্যোগ
এখন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা প্রশাসন বিমান চলাচলের জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছে। জেলাশাসক জানিয়েছেন, “বালুরঘাট বিমানবন্দর সমস্ত দিক দিয়ে উন্নতমানের। রাজ্য সরকার এতে বিশেষভাবে আগ্রহী এবং মুখ্যমন্ত্রী বারবার এটি চালুর জন্য উদ্যোগী হয়েছেন। আমাদের আশা, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এখান থেকে বিমান চলাচল শুরু করতে পারব।”
বালুরঘাট বিমানবন্দর: চ্যালেঞ্জ ও সমাধান
বালুরঘাট বিমানবন্দর চালু করার পথে কিছু গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তবে এই চ্যালেঞ্জগুলোর সমাধানে জেলা প্রশাসন ও রাজ্য সরকার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করছে। নিচে উল্লেখ করা হল প্রধান চ্যালেঞ্জ এবং তার সম্ভাব্য সমাধান:
১. কেন্দ্রীয় অনুমোদন না পাওয়া
-
চ্যালেঞ্জ: বিমান চলাচল শুরু করতে কেন্দ্রীয় সরকারের এয়ারপোর্ট অথরিটি এবং সিভিল অ্যাভিয়েশন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন প্রয়োজন। যদিও অবকাঠামোগত কাজ শেষ হয়েছে, তবে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে কিছু প্রয়োজনীয় অনুমোদন দেরি হওয়ার কারণে বিমান চলাচল শুরু করা সম্ভব হয়নি।
-
সমাধান: বর্তমানে রাজ্য সরকার এবং বালুরঘাট জেলা প্রশাসন কেন্দ্রীয় মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে এই অনুমোদন দ্রুত পেতে চেষ্টা করছে। সুকান্ত মজুমদার ও অন্যান্য রাজ্য নেতারা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধান করার জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
২. পূর্ববর্তী অবহেলা ও পরিত্যক্ত অবস্থা
-
চ্যালেঞ্জ: দীর্ঘদিন ধরে বিমানবন্দরটি অবহেলিত ছিল, যার ফলে রানওয়ে এবং অন্যান্য কাঠামো প্রায় জঙ্গলে ঢাকা পড়ে যায়। যদিও সম্প্রতি সংস্কার কাজ হয়েছে, তবে কিছু সময়ের জন্য পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকা বিমানবন্দরটি চালু করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
-
সমাধান: ২০১৬ সালে পূর্ত দপ্তর বিমানবন্দরটির ব্যাপক সংস্কার শুরু করে। নতুন রানওয়ে, প্যাসেঞ্জার লাউঞ্জ, এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল এবং অন্যান্য সুবিধার উন্নয়ন কাজ শেষ হয়েছে। বিমানবন্দরটি বর্তমানে পুরোপুরি আধুনিকীকৃত, এবং রাজ্য সরকারের পরিকল্পনা অনুসারে শীঘ্রই এটি চালু করা যাবে।
৩. অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতা
-
চ্যালেঞ্জ: একটি বিমানবন্দর পরিচালনা করতে ব্যাপক অর্থের প্রয়োজন, এবং পূর্ববর্তী সময়ে বালুরঘাট বিমানবন্দর পরিচালনায় আর্থিক সঙ্কট ছিল। সেই সঙ্গে যাত্রী এবং বিমানের অভাবও বড় একটি সমস্যা ছিল।
-
সমাধান: সরকার বিমান পরিষেবা চালু করার জন্য উপযুক্ত বিমান পরিবহন সংস্থা খুঁজে বের করার জন্য কাজ করছে। বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলি তাদের পরিষেবা চালু করলে, স্থানীয় অর্থনীতি এবং পর্যটন খাতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হবে, যা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার দিকে সাহায্য করবে।
৪. প্রযুক্তিগত সমস্যাগুলি
-
চ্যালেঞ্জ: বিমানবন্দরটির সংস্করণের সময় কিছু প্রযুক্তিগত সমস্যা দেখা দিয়েছিল, যেমন রানওয়ের সঠিক দৈর্ঘ্য এবং আধুনিক বিমান পরিচালনা ব্যবস্থার অভাব।
-
সমাধান: এই সমস্যাগুলি সমাধান করতে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এবং পরিবহণ দপ্তর একত্রে কাজ করছে। রানওয়ে সম্প্রসারণ করা হয়েছে এবং অন্যান্য প্রযুক্তিগত সুবিধা যেমন আধুনিক নেভিগেশন সিস্টেম, এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল টাওয়ার ইত্যাদি স্থাপন করা হয়েছে।
৫. রাজ্য সরকারের আন্তরিকতা
-
চ্যালেঞ্জ: অনেক সময় রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথ সমর্থন এবং ত্বরিত পদক্ষেপের অভাব দেখা দিয়েছে, যা বিমানবন্দর চালু করতে বাধা সৃষ্টি করেছে।
-
সমাধান: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রকল্পের প্রতি বেশ আগ্রহী এবং রাজ্য সরকারের সব দফতরকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনও অবিরাম চেষ্টা করছে বিমান পরিষেবা চালু করার জন্য।
ভবিষ্যতে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পরিকল্পনা
বালুরঘাট বিমানবন্দর চালু হলে, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবহন কেন্দ্র হয়ে উঠবে। কিন্তু কিছু চ্যালেঞ্জ এখনও রয়ে গেছে, যেমন যাত্রীবাহী বিমান পরিষেবা পরিচালনা, অর্থনৈতিক সঙ্গতি বজায় রাখা, এবং নিয়মিত পরিদর্শন ও উন্নয়ন নিশ্চিত করা। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারের সহায়ক পদক্ষেপ এবং স্থানীয় জনগণের সমর্থন প্রয়োজন।
এছাড়া, রাজ্য সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, নতুন বিমান সংস্থা এবং পর্যটন শিল্প আরও বর্ধিত হলে, বিমানবন্দরটির কার্যক্রম সফলভাবে চালু হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।